সুস্থ থাকার জন্য চিকিৎসকরা প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তেমনি একটি উপকারী শাক হচ্ছে কচু শাক। কচু শাকের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ প্রচুর। তাইতো এর চাহিদাও অনেক। কচু শাকের পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় এর চাহিদা ব্যপক। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে কচু শাক খুবই জনপ্রিয়।
কচু শাক নানা ভাবে খাওয়া হয়। তবে কচুপাতা ভর্তা ও তরকারিতে বেশি জনপ্রিয়। বাংলাদেশের মানুষের কাছে ইলিশ, চিংড়ি, ছোট মাছ বা শুটকি মাছ দিয়ে কচু শাকের তরকারি খুবই জনপ্রিয়।
কচুশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, তাই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়। আমাদের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে সব ডাক্তাররাই কচু শাক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই শাকে ভিটামিন এ-এর পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন বি এবং সি-ও।
এছাড়া কচুশাক আয়রনসমৃদ্ধ বলে এর সমাদর অনেক বেশি। এইশাক ভিটামিন এ-এর খুব ভালো উত্স, রাতাকানা রোগসহ ভিটামিন এ-এর অভাবে হওয়া সব ধরনের রোগ প্রতিরোধে কচু শাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কচু শাকই দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার অনেকখানি পূরণ করতে পারে।
কচুশাকের পুষ্টি উপাদান বেশি থাকায় সব বয়সের মানুষ খেতে পারে। এই শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান সমূহ। নিচে কচু শাকের পুষ্টি উপাদান আলোচনা করা হলো-
প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে থাকে, শর্করা-৬.৮ গ্রাম, প্রোটিন- ৩.৯ গ্রাম, লৌহ-১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন)-০.২২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন)-০.২৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ‘সি’-১২ মিলিগ্রাম, স্নেহ বা চর্বি-১.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ২২৭ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি-৫৬ কিলোক্যালরি।
এই শাকের সব চেয়ে বড় উপকারিতা হলো, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ও ফসফরাস। আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠনে কচু শাকের তুলনা হয়না। তাছাড়া ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচু শাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত কচু শাক খেলে দাঁত ও হাড় ভালো থাকবে।
কচু শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকে। এই আয়রন আমাদের রক্তশূন্যতা ভোগা থেকে রক্ষা করে। তাই রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য কচু শাক খাওয়া অবশ্যই দরকার।
কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে যা খাবারকে অতি সহজে হজম করতে সাহায্য করে। যেসব রোগীদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তারা নিয়মিত কচু শাক খেতে পারেন। এতে আপনাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে।
কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। ফলে এর লৌহ উপাদান আপনার দেহে সহজে আত্তীকরণ হয়ে যায়। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের ছোট বেলা থেকেই কচু শাক খাওয়ানো প্রত্যেকের উচিত।
কচু শাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ থাকে। এটি আমাদের রাতকানা, ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধসহ দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে দেয়। রাত কানা রোগ সারাতে কচু শাকের তুলনা হয় না।
কচু শাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল কমে তাই উচ্চরক্ত চাপের রোগীদের জন্য কচু শাক এবং কচু বেশ উপকারী। নিয়মিত কচু শাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও দিন দিন কমে।
কচু শাকে বিদ্যমান বিভিন্ন রকমের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গর্ভবর্তী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী। কচু শাক আমাদের কাছে সহজ লভ্য তাই দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী নারীরা ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য কচু বা কচু শাক খেতে পারেন।
আমাদের শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখতে কচু শাক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এই শাকের আয়রন ও ফোলেট রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এর ফলে অক্সিজেন সংবহন পর্যাপ্ত থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিন কে রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করে থাকে।
কচু শাকের অপকারিতা সামান্য পরিমানে রয়েছে। কচু শাক বা কচু খেলে অনেক সময় গলা চুলকায়। কারণ এতে অক্সলেট নামক উপাদান রয়েছে। এই জন্য কচু রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার করা উচিত।
তবে যাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা বেশি আছে তাদের কচু বা কচু শাক না খাওয়াই ভালো। কচুশাকের অপকারিতা এর মধ্যে আর একটি অন্যতম গ্যাসট্রিকের সমস্যা হতে পারে।